বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের ন্যায্য দাবি পূরণ সম্ভব নয়। তাই পুরনো বন্দোবস্ত থেকে বেরিয়ে নতুন ধারার একটি বাংলাদেশ গড়তে হবে; যার রূপরেখা ‘জুলাই সনদে’ উপস্থাপিত হয়েছে। এই সনদকে আইনী ভিত্তি প্রদান সময়ের দাবি।
তিনি শনিবার দেওয়ান বাজারস্থ চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের কার্যালয়ে বাংলাদেশ ইসলামী একাডেমি (বিআইএ) মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে ৫ দফা গণদাবী আদায়ের লক্ষ্যে পেশাজীবীদের নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিগত ৫৪ বছরে রাষ্ট্র কাঠামো জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলনের পরিবর্তে দমন-পীড়ন, দুর্নীতি ও শোষণের মাধ্যমে টিকে ছিল। ক্ষমতার পালাবদল হলেও কাঠামোগত পরিবর্তন হয়নি। ফলে জনগণ প্রকৃত অর্থে মুক্তি পায়নি। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে ন্যায়বিচার থাকবে, মানুষের বাকস্বাধীনতা থাকবে, ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত থাকবে এবং রাজনৈতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে।
মুহাম্মদ শাহজাহান পেশাজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা সমাজের অগ্রসর শ্রেণি। আপনাদের দায়িত্ব শুধু নিজ নিজ পেশায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করা। আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ হই, তাহলে এই পরিবর্তন আর কেউ ঠেকাতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।
বাংলদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমির পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ ও ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুসের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর জামায়াতের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, ডা. এ টি এম রেজাউল করিম, ডা. মুহাম্মদ ইরফান চৌধুরী, বিশিষ্ট ব্যাংকার নাঈম উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার জিল্লুর রহমান, ডা. মাজহারুল ইসলাম, ডাক্তার সাজ্জাদ হোসাইন, ইঞ্জিনিয়ার তাজুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ ইসহাক, ব্যাংকার আবুল কালাম প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ নজরুল বলেন, চব্বিশের জুলাই গণ আন্দোলনে পেশাজীবীদের সক্রিয়তা ছিলো চমৎকার, নতুন বাংলাদেশ গঠনে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘ দেড়যুগের ফ্যাসিবাদী শাসন উৎখাতে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটেছিল নজিরবিহীন ঘটনা। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার, দল ও কর্মীবাহিনীকে ফেলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। দু’হাজারের বেশি শাহাদাতসহ সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়নের পথ মাড়িয়ে আমরা পেয়েছিলাম দ্বিতীয় স্বাধীনতা।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের ছত্রছায়ায় যেসকল পেশাজীবীরা আত্মবিক্রয় করে দিয়েছিল তারাই লুটেরা ও খুনির পক্ষে নির্লজ্জভাবে ক্ষমতাকেন্দ্রিক অপযুক্তি দিয়ে তৎপর ছিলো অথবা নীরবতার গ্লানিময় জীবন বেছে নিয়েছিল। বিপরীতে বিবেকবান পেশাজীবীরা সাহস ও আন্তরিকতায় জনতার পাশে ছিলেন, দিকনির্দেশনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন, আন্দোলনকে সৃষ্টিশীলতা ও মেধার মাধ্যমে জাগিয়ে তুলেছেন। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যাংকার, কৃষিবিদ, আইনজীবি, শিক্ষকসহ সকল পেশার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছাত্র-শ্রমিক-জনতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন জীবন-জীবিকার নানা ঝুঁকি নিয়ে। কিন্তু, কাঙ্খিত নতুন বাংলাদেশ অর্জনের পথ এখনো মসৃণ হয়নি। নানা ষড়যন্ত্র ও বাধা পেরিয়ে কাঙ্খিত কল্যাণ রাষ্ট্রের লক্ষ্য অর্জনে পেশাজীবীদের সোচ্চার ভূমিকা আশা করছি।
উক্ত আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, নগর কর্মপরিষদ সদস্য ডা. মুহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান, হামেদ হাসান ইলাহী, প্রফেসর মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, মাহমুদুল আলম, ডা. মুহাম্মদ ইউসুফ, ইঞ্জিনিয়ার ফাহমি প্রমুখ।