গতকাল মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দেশের একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা।
তিনি জানান, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের মধ্যেই গেজেট মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। এ জন্য পরের রাজনৈতিক সরকার আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে না। এজন্য তহবিল বরাদ্দ দেওয়া হবে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন। দেশে প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মচারী রয়েছেন। সশস্ত্র বাহিনী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এবং সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের যুক্ত করলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২৪ লাখে।
পে কমিশনের একজন সদস্য জানিয়েছেন, এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি নতুন পে স্কেলের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন গ্রেডের বিষয়ে। এছাড়া বিদ্যমান পে স্কেলের তুলনায় গড়ে কী হারে বাড়ানো হবে সেটাও চূড়ান্ত নয়।
বর্তমানে সর্বোচ্চ পদ (গ্রেড-১) ও সর্বনিম্ন পদ (গ্রেড-২০)-এর বেতনের অনুপাত প্রায় ১০:১। নতুন কাঠামোতেও এ অনুপাত ৮:১ থেকে ১০:১-এর মধ্যে থাকবে। প্রতিবেশী ভারতসহ অন্যান্য দেশে এ ধরনের অনুপাত বিদ্যমান রয়েছে বলে কমিশন পর্যালোচনায় পেয়েছে। ফলে বিদ্যমান ২০টি গ্রেড থেকে গ্রেডের সংখ্যা যদি কমানোও হয়, তারপরেও সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের ক্ষেত্রে একই অনুপাত বহাল রাখার সুপারিশ করবে কমিশন।
পে কমিশনের ওই সদস্য আরও জানান, চিকিৎসা ভাতাসহ কমিশন ইতোমধ্যে কয়েকটি ভাতা বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে একজন সরকারি কর্মচারী চাকরির শুরু থেকে অবসরের পর পর্যন্ত মাসে ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। কমিশন এ ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব দেবে, যেখানে অবসরোত্তর সময়ে বাড়তি সুবিধা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া কর্মচারীদের সন্তানদের শিক্ষা ভাতাও বাড়ানোর সুপারিশ করবে কমিশন।
বর্তমানে জাতীয় বেতন কাঠামোর আওতায়, প্রায় ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-ভাতা পান। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বিদ্যুৎ কোম্পানি, সশস্ত্র বাহিনী ও বিচারকদের আলাদা বেতন কাঠামো রয়েছে। এগুলোতে জাতীয় কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকলেও বেতন-ভাতায় পার্থক্য আছে বলে উল্লেখ করেন কমিশনের এক সদস্য।
তিনি বলেন, এসব খাত আলাদা কাঠামোতেই থাকবে, তবে কমিশন এগুলোকে জাতীয় কাঠামোর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার সুপারিশ করবে।
কমিশন মনে করছে, সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো বেসরকারি খাতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কারণ বর্তমানে বিনিয়োগের পরিস্থিতি দুর্বল। এজন্য আগামী অক্টোবর মাসে ব্যবসায়ী চেম্বার ও সংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে কমিশন মতামত নেবে।
এছাড়া পে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, গবেষণায় সম্পৃক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামোতে বিশেষ ভাতার সুপারিশ করা হবে। প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া এই ভাতা অন্য সামরিক বা বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সদস্য বলেন, দেশে তরুণদের মধ্যে ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী ও গবেষক হওয়ার আগ্রহ কমে গেছে। অনেকে চিকিৎসা বা প্রকৌশল পড়লেও অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। ফলে এসব বিশেষায়িত ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল কমছে এবং বাংলাদেশ উদ্ভাবনে পিছিয়ে যাচ্ছে। তাই কমিশন সর্বসম্মতিক্রমে এ খাতে বিশেষ ভাতার প্রস্তাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী ও বিচার বিভাগের আলাদা বেতন কাঠামো রয়েছে, জাতীয় কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকলেও যেখানে সামরিক বাহিনীর জন্য বাড়তি ভাতা আছে। একইভাবে ডাক্তারি, প্রকৌশল, গবেষণা ও উদ্ভাবনে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতেই এই বিশেষ ভাতা প্রস্তাব করা হবে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের ৮২ হাজার ৯৭৭ কোটির তুলনায় বেশি।