বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন বাংলাদেশ আজ রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতার দাপট, এবং নির্বাচন প্রহসনের এক ভয়াবহ দুষ্টচক্রে আবদ্ধ ছিল। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে একটি নতুন, ন্যায়ের বাংলাদেশ গঠন। এই নতুন বাংলাদেশের সূচনা হবে ‘জুলাই সনদ’-এর বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে। এই সনদে আমরা যে কাঠামোগত ও রাজনৈতিক সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছি, তা দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা, ন্যায়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নীতি এবং প্রকৃত গণতন্ত্রের সোপান। তাই নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করতে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি অপরিহার্য।
শুক্রবার বাদে জুমা চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের গণমিছিল ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত এই রাষ্ট্রক্ষমতা, নির্বাচন ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক মাঠ কিছু সুবিধাভোগী দলের জন্য সংরক্ষিত থাকবে, ততদিন এ দেশে কখনও ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি হবে না। আমরা এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি চাই, যেখানে সব দল সমান সুযোগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে। কিন্তু বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা — বিশেষ করে জাতীয় পার্টি ও তথাকথিত ১৪ দল — নির্বাচনে দলীয় ক্ষমতা পেছনের দরজা দিয়ে সংরক্ষণ করে রেখেছে। এরা হচ্ছে সেই দালাল শ্রেণি, যারা জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে বছরের পর বছর এই অবৈধ ক্ষমতার অংশীদার। দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষায় এই দলগুলোকে নিষিদ্ধ করা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ব্যর্থ ও জনবিচ্ছিন্ন। তাই আগামী নির্বাচন অবশ্যই ‘পিআর পদ্ধতি’ অর্থাৎ Proportional Representation-এর ভিত্তিতে হতে হবে, যাতে জনগণের প্রকৃত ভোটের প্রতিফলন সংসদে ঘটে। এটাই প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা — যেখানে জনমতের অনুপাতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। July সনদে আমরা এই নির্বাচন পদ্ধতির প্রস্তাব দিয়েছি, যা এ দেশের রাজনৈতিক বৈষম্য ও নির্বাচনী জালিয়াতির অবসানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন এ দেশে যারা দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্র হত্যা করেছে, ভোটের অধিকার হরণ করেছে, বিরোধীদের উপর দমন-পীড়ন চালিয়েছে — সেই একই গোষ্ঠী এখন আবার নির্বাচনের নামে নতুন ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্রের জবাব জনগণ রাজপথে দেবে। জামায়াতে ইসলামী জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে, আমাদের দাবি ন্যায্য, আমাদের পথ শান্তিপূর্ণ — কিন্তু লক্ষ্য অনড়: ইনসাফ ও জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা।”
বক্তব্য শেষে মুহাম্মদ শাহজাহান জনগণকে আহ্বান জানান, আসুন, আমরা সকলে মিলে নতুন বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যাই — ইনসাফভিত্তিক, নৈতিকতা-সমৃদ্ধ, গণতান্ত্রিক এক রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য। জুলাই সনদকে আমাদের জাতীয় চুক্তি হিসেবে গ্রহণ করে আইনি ভিত্তি দেওয়া হোক, এটাই আজকের ঐক্যবদ্ধ জনতার ঘোষণা
চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদ উত্তর গেটে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস ও নগর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ মোরশেদুল ইসলামের যৌথ পরিচালনায়
এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য, নগর জামায়াতের সেক্রেটারি ও চট্টগ্রাম ২ ফটিকছড়ি আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ মোবারক হোসেন, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও চট্টগ্রাম—১০ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম-৯ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ডা. এ কে এম ফজলুল হক, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, চট্টগ্রাম ৮ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডা. আবু নাছের, চট্টগ্রাম ১১ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শফিউল আলম প্রমুখ।
গণমিছিল পূর্বসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে নগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র সাম্য-মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার এবং চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্খা একটি বৈষম্যহীন সমাজ কায়েম করে শহীদ আবু সাঈদসহ দু’সহস্রাধিক শহীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষেই ছাব্বিশের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে। ৫ দফা গণদাবী তথা জুলাই সনদ, পিআর সিস্টেম, লুটেরা-খুনিদের দৃশ্যমান বিচার, ফ্যাসিস্টের দোসর জাপাসহ চৌদ্দ দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। ১৯৭৩ সালের ভোট ডাকাতি, হোন্ডা-গুণ্ডা নির্বাচন কেন্দ্র ঠাণ্ডার নির্বাচন, গৃহপালিত বিরোধী দলের একদলীয় শাসন, মাগুরা স্টাইল ও পনের ফেব্রুয়ারি স্টাইলের নির্বাচন, ফেমা (ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং এলায়েন্স) সহ নানা ষড়যন্ত্রের ছিয়ানব্বই নির্বাচন, ২০০৮ এর ডিজিটাল কারচুপির অস্বাভাবিক পরিসংখানের নির্বাচন, ভোটার বিহীন চৌদ্দের নির্বাচন, নিশিরাত বা ডামি-আমি খেলার নির্বাচন বাংলাদেশে আর করতে দেয়া হবে না। ছোট বড় প্রতিটি দলকে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেয়া এবং প্রত্যেক ভোটারের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় পিআর সিস্টেমের কোন বিকল্প নেই।
সমাবেশ শেষে গণমিছিল চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ থেকে শুরু হয়ে কাজীর দেউড়ি মোড় হয়ে জামাল খানে এসে চট্টগ্রাম মহানগরী ভারপ্রাপ্ত আমির পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বক্তব্যের মাধ্যমে মিছিল শেষ হয়।
উক্ত গণমিছিল ও সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন নগর কর্মপরিষদ সদস্য, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, হামেদ হাসান ইলাহী, ফখরে জাহান সিরাজি সবুজ প্রমুখ।