জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে একটি প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। সেটিই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে উপস্থাপন করা হবে। এটি হবে কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর চূড়ান্ত সংলাপ।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, সার্বিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে।
কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১০ অক্টোবরের মধ্যে সুপারিশসহ জুলাই সনদ সরকারের কাছে পাঠানো হবে। এরপর সরকারের মতামতের ভিত্তিতে সনদ স্বাক্ষরের দিন নির্ধারণ করা হবে। আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সনদ স্বাক্ষর সম্ভব হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
গণভোট নিয়ে ভিন্নমত
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সংসদ নির্বাচন এবং সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে একসঙ্গে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দল নির্বাচন-পূর্ব সংবিধান সংশোধনের দাবি জানিয়েছে। তবে কেউ কেউ আশঙ্কা করছে, গণভোট আয়োজন করলে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে, ফলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে দেশে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে।
এ ছাড়া গণভোটে কয়টি প্রশ্ন থাকবে, কোন প্রশ্নে ভোট হবে এবং ভোটের ফল নেতিবাচক হলে পরবর্তী করণীয় কী—এই প্রশ্নগুলোতেও দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।
দুটি বিকল্প প্যাকেজ প্রস্তাব
কমিশনের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে অংশ নেওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে দুই ধরনের ‘প্যাকেজ প্রস্তাব’ রাখা হয়েছে।
এই প্রস্তাব অনুযায়ী, আদেশ জারির পর রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সের মাধ্যমে ১০৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া হবে। গণভোটের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে অন্তবর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করবে।
দ্বিতীয় প্যাকেজে থাকবে—সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণপরিষদ বা সংবিধান সংস্কার সভা গঠনের প্রস্তাব; নির্বাচনে জয়ী দল সরকার গঠন করবে; অন্তর্বর্তী সরকার সরে দাঁড়াবে; নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেই সভাকে পাঁচ বছরমেয়াদি সংসদে রূপান্তর করা হবে এবং এই প্রস্তাবে এনসিপি, গণতন্ত্র মঞ্চ এবং কয়েকটি বাম দলের প্রস্তাবিত গণপরিষদের ধারণাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গণভোটের রূপরেখা
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে দ্রুত সিদ্ধান্ত জরুরি
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর করতে জুলাই সনদ দ্রুত স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। যদিও সনদের ৮৪টি বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে, তবু সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখনো মতানৈক্য রয়েছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে দ্রুত সমঝোতায় পৌঁছানোর আহ্বান জানানো হয়। এরপর থেকে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে কমিশন।
উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয় এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ১৫ আগস্ট কমিশনের মেয়াদ এক মাস বাড়ানো হয়। এর পরও সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় কমিশনের মেয়াদ ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।