চাঁদা না পেয়ে মিথ্যা মামলা! সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাকমেইল ও ডিএসএ লঙ্ঘনের’ অভিযোগ আনলেন মাওলানা জালাল উদ্দিন গং।

নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম

​চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে সাংবাদিক শওকত হোসেন চাঁটগামীর ওপর ‘সংঘবদ্ধ হামলা ও হত্যার চেষ্টা’র মামলার জেরে সৃষ্টি হয়েছে তুমুল উত্তেজনা। অভিযুক্ত মাওলানা জালাল উদ্দিন সহ সাতজন আসামীর বিস্ফোরক পাল্টা অভিযোগ আইনি অঙ্গনে এনেছে নতুন মোড়। অভিযুক্তদের দাবি, সাংবাদিকের মামলাটি সম্পূর্ণ ‘মিথ্যা, হয়রানিমূলক’ এবং মূল কারণ হলো ‘২ লক্ষ টাকা চাঁদা না পেয়ে প্রতিশোধ’ নেওয়া। তারা উল্টো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ (DSA) লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ এনেছেন।

​মামলার বাদী মোহাম্মদ শফকত হোসাইন চাটগামী গত ০৩/৯/২০২৫ ইং তারিখের ঘটনায় বাঁশখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাতজনের বিরুদ্ধে নালিশী দরখাস্ত (সি.আর মামলা নং- সি আর ১৫৮৯/২০২৫ইং) দায়ের করেছেন। আসামীদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৭ (হত্যার চেষ্টা), ৩৭৯/৩৮০ (চুরি/লুট) এবং ৫০৬(২) (হত্যার হুমকি) সহ একাধিক গুরুতর ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে।

​মামলার বিবরণ অনুযায়ী, বাঁশখালী সদরস্থ সৌদিয়া মার্কেটের ২য় তলায় বাদীর পরিচালিত মাদরাসার অফিসে এই ঘটনা ঘটে। সাংবাদিক চাঁটগামী দাবি করেন, তাঁর চ্যানেল (AKN Bangla) বিতর্কিত ব্যক্তি ও সাবেক এমপির ‘দুর্নীতি ও নারী কেলেঙ্কারীর খবর’ প্রকাশ করায় আসামীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন।

​অভিযোগে বলা হয়েছে, ১ নং আসামী জালাল উদ্দিন সরাসরি ‘হত্যার উদ্দেশ্যে’ বাদীর গলা চেপে ধরে ভিডিও ডিলিট করতে বলেন। অস্বীকৃতি জানালে, জালাল উদ্দিন লোহার রড দিয়ে আঘাত করলে বাদীর হাতে গুরুতর হাড়ভাঙা জখম হয়। একইসাথে, হামলাকারীরা বাদীর পকেট ও মাদরাসার ক্যাশ বাক্স থেকে মোট লক্ষাধিক টাকা লুট করে এবং ঘটনাস্থল ত্যাগের আগে বাদীকে খুন করে লাশ গুমের হুমকি দেয়।

​অভিযুক্তদের পাল্টা ‘বোমা’: চাঁদা, ব্ল্যাকমেইল ও ডিএসএ লঙ্ঘনের অভিযোগ ​অন্যদিকে, এই মামলাটিকে ‘মিথ্যা, হয়রানিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছেন ১ নাম্বার আসামী মাওলানা জালাল উদ্দিন গং

তাদের পাল্টা দাবি
১. ভিডিও প্রচার ও চাঁদা দাবি: সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামী ২ নং আসামী ফরহানাজ বেগমের অনুমতি ছাড়াই একটি ভিডিও (‘এডিটিং করা খারাপ ভিডিও’) AKN বাংলা পোর্টালে প্রচার করেন। ভিডিওটি ডিলিট করার বিনিময়ে চাটগামী মাওলানা জালাল উদ্দিনের কাছে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

২. চাঁদা পরিশোধের দাবি: অভিযুক্তদের দাবি, দাবিকৃত চাঁদার ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল, যার মধ্যে ৩ নং অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন নিজে উপস্থিত থেকে ৪০ হাজার টাকা চাঁটগামিকে প্রদান করেন।

৩. প্রতিশোধমূলক মামলা: বাকি ৭০ হাজার টাকা না পাওয়ায় ভিডিওটি পুনরায় প্রচার করা হয়। মাওলানা জালাল উদ্দিন আইনি পদক্ষেপ নেওয়ায় এবং আইনের নোটিশ পাঠানোয়, প্রতিশোধমূলকভাবে হয়রানি করতে এই সি.আর মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

​অভিযুক্ত জালাল উদ্দিন গং আরো দাবি করেন, ব্ল্যাকমেইল করে এবং অনুমতি ব্যতীত এডিটিং করা ভিডিও প্রচার করে শওকত হোসেন চাঁটগামী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (DSA) লঙ্ঘন করেছেন, যা একটি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। ৪ নম্বর অভিযুক্ত সাংবাদিক শিব্বির আহমেদ এবং ৭ নম্বর অভিযুক্ত আমিনুল ইসলামও এই অভিযোগকে ‘কাল্পনিক’ এবং ‘সংবাদ সংগ্রহের কারণে মিথ্যা মামলা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস এটি একটি মিথ্যা মামলা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষ তা উদঘাটন হবেই।

​আইনের দ্বারস্থ উভয় পক্ষ: আসল সত্য উদঘাটনের দাবি
​অভিযুক্তরা অবিলম্বে এই হয়রানিমূলক সিআর মামলাটি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে নিঃশর্তে প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন। একইসাথে, তাঁরা শওকত হোসেন চাটগামী সহ নিউজ পোর্টালে ‘এডিটিং করা খারাপ ভিডিও প্রচারকারী ও ব্ল্যাকমেইলারদের’ আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও তুলেছেন।

​সাংবাদিকের ‘হামলা ও লুট’ বনাম মাওলানার ‘চাঁদা না পেয়ে মিথ্যা মামলা’ এবং ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন’—এই তিনমুখী আইনি যুদ্ধ বর্তমানে বাঁশখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারাধীন। এখন পুরো বাঁশখালীর দৃষ্টি আদালতের দিকে। কার দাবি সত্য, কে অপরাধী—এই নাটকের শেষ দৃশ্যে আইনের নিরপেক্ষ তদন্তে আসল সত্য উন্মোচিত হবে,

Leave a Comment