চট্টগ্রাম, বুধবার, ৩১ মে ২০২৩ , ১৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নওগাঁর মান্দায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা,স্বামী আটক

প্রকাশ: ১২ জুলাই, ২০২২ ১০:২৪ : পূর্বাহ্ণ

নওগাঁর মান্দায়  যৌতুকের দাবিতে মধ্যযুগীয় কায়দায় স্ত্রীর শরীরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টায় ইস্পিন হোসেন বাবু (২৯) কে আটক করেছে পুলিশ।

সোমবার সকালে  আহত স্ত্রীকে শশুর বাড়িতে দেখতে যাওয়ার পর স্থানীয়দের সহযোগীতায়  আটক করা হয় তাকে।এরপর নিয়ামতপুর থানা পুলিশের আন্তরিক সহযোগীতায় ওইদিন বিকেলে মান্দা থানায় সোপর্দ করা হয়।
আটককৃত ইস্পিন হোসেন বাবু হলেন,মান্দা উপজেলার ১ নং ভারশোঁ ইউনিয়নের হোসেনপুর (বটতলী) গ্রামের মৃত মছির উদ্দিনের ছেলে।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ, তাঁর স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৫ বছর আগে নওগাঁর মান্দা  উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের হোসেনপুর (বটতলী) গ্রামের মৃত মছির উদ্দিনের ছেলের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী নিয়ামতপুর উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের নাকইল (উত্তরপাড়া) গ্রামের আফজাল হোসেন সরদারের মেয়ে সুমনা খাতুন (২২) এর বিয়ে হয়। সুমনা  ইস্পিন হোসেন বাবু’র ২য়  স্ত্রী। তাদের পরিবারে ইসমাইল হোসেন নামে ৩ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। ইস্পিন হোসেন বাবু একজন ঔষুধ বিক্রেতা। মান্দার চৌবাড়িয়া বাজারে জননী ফার্মেসী নামে তার একটি ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ যে, আগের স্ত্রীও ইস্পিন হোসেন বাবু’র নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে তালাক নিয়ে চলে যান। সুমনার সঙ্গে বিয়ের সময় তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা যৌতুকও নেন ইস্পিন হোসেন বাবু । এরপরেও সুমনার কাছে আরও যৌতুক দাবি করেন। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিসহ বিভিন্ন বাহানায় সুমনাকে নির্যাতন করে আসছেন বলেও তাঁদের অভিযোগ।

গৃহবধূর বাবা আফজাল হোসেন জানান, বিষয়টি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে একাধিকবার সালিসও হয়েছে। এরপরেও ববিতার ওপর নির্যাতন থামেনি। গত রবিবার ঈদুল আজহার দিন সন্ধ্যায় তুচ্ছ ঘটনায় তাকে মারধর শুরু করেন ইস্পিন হোসেন বাবু । এরই এক পর্যায়ে সুমনাকে ঘরের ভিতর আটকিয়ে রেখে হত্যার উদ্দ্যেশে মেয়ের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে আহত মেয়ের চিৎকারে স্থানীয়রা উদ্ধার করে আমাদের খবর দিলে গভীর রাতে জামাইয়ের বাড়ি থেকে মেয়েকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসি।

গৃহবধূ সুমনা  বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময় তাঁর স্বামী  যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু আমার পরিবার গরীব হওয়ায় তার দাবি করা পূনরায় লক্ষাধিক যৌতুকের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। এর ফলে অধিকাংশ সময় তাকে বাপের বাড়িতেই থাকতে হয়েছে। বর্তমানে জীবন জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে অন্যের বাড়িতে ক্যাপ তৈরীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অথচ, একই দাবিতে গত রবিবার তাঁর ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। এরই এক পর্যায়ে তাকে ঘরের ভিতর আটকিয়ে রেখে হত্যার উদ্দ্যেশে পরিহিত পোশাকে (সালোয়ার – কামিজ) গ্যাসলাইট দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ওই সময় আগুন লেগে তার শরীরের আঠারো ভাগ  (পেট) পুড়ে যায়। এরপর স্থানীয়রা উদ্ধার করে তার বাবার বাড়িতে খবর দেন। এরপর তার বাবার বাড়ির লোকজন গিয়ে তাকে ওইদিনই রাতেই তাকে তার বাবার বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরেরদিন দুপুরে তার বাবার বাড়ির লোকজন তাকে নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  ভর্তি করিয়ে দেন। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। তিনি এ জঘন্যতম ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।’

অভিযুক্ত ইস্পিন হোসেন বাবু বলেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। এবারের মতো আমাকে মাফ করে দিয়েন। প্লিজ, আমার জীবনটি শেষ করে দিয়েন না। আমি সুমনাকে অনেক ভালোবাসি। আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না।  বিষয়টির জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সেদিন মদ- চোয়ানী খেয়ে মাথা ঠিক ছিলো না তাই এমনটি করেছি। এ জন্য আমি সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আগামীতে আর এরকম হবে না। এরপর কিছু হলে আপনারা আমাকে যে শাস্তি দিবেন, আমি তাই মাথা পেতে নিবো।

এ ব্যাপারে মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, যৌতুকের দাবিতে ‘নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ সুমনাকে হত্যার উদ্দ্যেশে শরীরে (পেট) আগুন দিয়ে ঝলসে দেওয়ার  ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (খ) ধারা মোতাবেক দায়েরকৃত মামলায় ইস্পিন হোসেন বাবুকে আটকের পর মঙ্গলবার সকালে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।’

Print Friendly and PDF