ক্যাম্পে কয়েক হাজার মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন রোহিঙ্গারা। নামাজ শেষে রোহিঙ্গারা যাতে তাদের হারানো অধিকার ও ভিটেবাড়ি ফিরে পেয়ে স্বদেশে ফিরে যেতে পারেন এ কামনা করা হয়। এ সময় অনেকে জোরে জোরে কাঁদতে থাকেন।
কয়েক বছর আগে রোজার ঈদে নিজের দেশে পাড়া–মহল্লার প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ লোকের আয়োজন করে খাইয়েছিলেন গৃহিণী খুরশিদা বেগম ও তার স্বামী। কিন্তু আজকের ঈদের দিন দেশ থেকে বিতাড়িত খুরশিদা বেগমের মন ভালো নেই। ঋণ করে বাচ্চাদের কাপড় কিনে দিলেও নিজের জন্য কিনতে পারেননি কাপড়। কিন্তু মিয়ানমারের কিয়াংমং এলাকায় বেশ অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের গৃহিণী ছিলেন তিনি।
কুতুপালংস্থ ক্যাম্প ডি ৪ এর সি ব্লকের খুরশিদা বেগম বলেন, যে দেশে বসবাস করছি, এ দেশের মানুষের দয়ার ওপর। তারা আমাদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার বড় পরিচয় দিয়েছেন। আমরা অসহায়। সবাই নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই।
শুধু খুরশিদা বেগম নন, উখিয়ার টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সবারই একই অবস্থা। তারা বলছেন, বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে মানবতার বড় পরিচয় দিয়েছে। এখন সবাই নিজ দেশে ফিরে যেতে চান।
এসময় ঝুপড়ি ঘরের আরেক গৃহিণী বলেন, আমার স্বামী বলি বাজার এলাকার চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু ভিটেবাড়ি–ধনসম্পদ ছেড়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসতে হয়েছে আমাদের। এভাবে ঈদ হবে, জীবনে কখনো কল্পনাও করিনি। তারপরও খোলামেলাভাবে এখানে নামাজ আদায় করতে পারায় আমরা মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।
আরেক গৃহিণী মমতাজ বেগম বলেন, বাচ্চা ও আত্মীয়স্বজনের আপ্যায়নের এক কেজি সেমাই রান্না করেছি। আমাদের আর কিছু করার সামর্থ্য নেই।
মাওলানা রশিদ বলেন, ঈদের নামাজ আদায় শেষে মোনাজাতে সবাই দুহাত তুলে দোয়া করেছি, যাতে ভিটেবাড়ি ফিরে পেয়ে স্বদেশে ফিরে যেতে পারি।
ঈদে ক্যাম্পে সবচেয়ে বেশি আনন্দে মেতে ওঠে রোহিঙ্গা শিশুরা। একে অপরের সঙ্গে খেলায় মেতে ওঠার পাশাপাশি মেতে ওঠে নাগরদোলায়।
আর ক্যাম্পে দায়িত্বরত কর্মকর্তা সুচিং মং মারমা জানালেন, সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ায় রোহিঙ্গাদের ঈদ উদ্যাপন আনন্দদায়ক হচ্ছে। তাদের মধ্যে আনন্দের ভাব ছিল এবং কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছেন ১১ লাখেরও বেশি মিয়ানমার নাগরিক।